আমরা আমাদের চারপাশে অসংখ্য যন্ত্রপাতিকে ঘুরতে দেখি, তাই আমাদের মনে হতে পারে এটাই বুঝি চুম্বক এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের সবচেয়ে বড় অবদান। আসলে চুম্বকের এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের সবচেয়ে বড় অবদান কিন্তু তার তাড়িত আবেশ অর্থাৎ চৌম্বক ক্ষেত্র দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা। বিজ্ঞানী ওয়েরস্টেড প্রথমে দেখিয়েছিলেন কোনো একটা পরিবাহী তারের লুপের ভেতর যদি চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তন করা হয় তাহলে সেই লুপের ভেতর তড়িচ্চালক শক্তি (EMF) তৈরি হয়, যেটা সেই লুপের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করতে পারে। এই বিষয়টি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ জেনারেটর তৈরি করা হয়েছে, যেখানে পরিবাহী তারের ভেতর দিয়ে চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তন করে বিদ্যুৎ তৈরি হয়।
একটা কয়েলের দুই মাথা যদি একটা অ্যামিটারে লাগানো হয় এবং যদি সেই কয়েলের ভেতর একটা দণ্ড চুম্বক ঢোকানো হয় (চিত্র 12.12) তাহলে আমরা ঠিক ঢোকানোর সময় অ্যামিটারে এক ঝলক বিদ্যুৎ প্রবাহ দেখতে পাব। আমরা যখন চুম্বকটা টেনে বের করে আনব তখন আবার আমরা অ্যামিটারে এক ঝলক বিদ্যুৎ প্রবাহ দেখব তবে এবারে উল্টো দিকে। আমরা যদি চুম্বকের মেরু পরিবর্তন করি তাহলে অ্যামিটারেও বিদ্যুতের দিক পরিবর্তন দেখতে পাব! সুতরাং আমরা বলতে পারি একটি তারের কুণ্ডলীতে চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তন করার সময় কুণ্ডলীর ভেতর ভোল্টেজ এবং বিদ্যুৎ প্রবাহ সৃষ্টি করাকে তাড়িতচৌম্বক আবেশ বলে। এই ভোল্টেজকে আবিষ্ট ভোল্টেজ এবং বিদ্যুৎ প্রবাহকে আবিষ্ট বিদ্যুৎ প্রবাহ বলে।
এই পরীক্ষাটি করার সময় আমরা কয়েলের ভেতর চৌম্বক ক্ষেত্র পরিবর্তন করার জন্য একটা চুম্বককে কয়েলের ভেতর নিয়েছি এবং বের করে এনেছি। আমরা অন্য কোনোভাবে চৌম্বক ক্ষেত্র পরিবর্তন করতে পারতাম তাহলেও আমরা একই বিষয় দেখতে পেতাম। কয়েলের ভেতর চৌম্বক ক্ষেত্র পরিবর্তন করার আরেকটা উপায় হচ্ছে, এর কাছে চুম্বকের বদলে দ্বিতীয় একটা কয়েল নিয়ে আসা এবং সেই কয়েলে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করিয়ে সেখানে চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করা। যদি দ্বিতীয় কয়েলটিতে চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য একটা ব্যাটারিকে একটা সুইচ দিয়ে সংযোগ দেওয়া হয়। তাহলে সুইচটি অন করে দ্বিতীয় কয়েলে চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করা যাবে, আবার সুইচটি অফ করে চৌম্বক ক্ষেত্র অদৃশ্য করে দেওয়া যাবে। প্রথম কয়েলটির কাছে দ্বিতীয় কয়েলটি রেখে যদি সেটিতে চৌম্বক ক্ষেত্র একবার তৈরি করা হয় এবং আরেকবার নিঃশেষ করা হয় তাহলে প্রথম কয়েলের ভেতর চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তন হবে এবং আমরা অ্যামিটারে সেজন্য বিদ্যুৎ প্রবাহ দেখব। সুইচ অন করে যখন বিদ্যুৎ প্রবাহ তৈরি করা হবে তখন অ্যামিটারের একদিকে তার কাঁটাটি নড়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ দেখাবে-সুইচটি অফ করার সময় আবার কাঁটাটি অন্যদিকে নড়ে বিপরীত দিকে বিদ্যুৎ প্রবাহ দেখাবে!
এখানে যে বিষয়টি মনে রাখতে হবে সেটি হচ্ছে, যখন চৌম্বক ক্ষেত্র পরিবর্তন হয় শুধু তখন বিদ্যুৎ প্রবাহ হয়। একটা কয়েলের মাঝখানে প্রচন্ড শক্তিশালী একটা চুম্বক রেখে দিলে কিন্তু কয়েল দিয়ে কোনো বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে না। শুধু যখন চুম্বকটি নাড়িয়ে চৌম্বক ক্ষেত্র পরিবর্তন করা হবে তখন বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে।
কোন মন্তব্য নেই