তোমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে দুটি পাত্রে যদি পানি থাকে এবং একটি নল দিয়ে যদি পানির পাত্র দুটোকে জুড়ে দেওয়া যায় তাহলে যে পাত্রে পানির পৃষ্ঠতল উঁচুতে থাকবে সেখান থেকে অন্য পারে পানি চলে আসবে। কোন পাত্র থেকে কোন পাত্রে পানি আসবে সেটা পানির পরিমাণের ওপর নির্ভর করে না, সেটা নির্ভর করে পানির পৃষ্ঠতলের উচ্চতার উপরে।
ঠিক সে রকমভাবে আমরা দেখেছিলাম ভিন্ন তাপমাত্রায় দুটো পদার্থকে যদি একটার সাথে আরেকটাকে স্পর্শ করানো যায় তাহলে তাপ কোন পদার্থ থেকে কোথায় যাবে সেটা সেই পদার্থের তাপের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে না, সেটা নির্ভর করে তাপমাত্রার ওপর। তাপমাত্রা যার বেশি সেখান থেকে তাপ প্রবাহিত হয় তাপমাত্রা যার কম সেখানে। তাপমাত্রা বেশি হলেও অনেক কম তাপ রয়েছে সেরকম বস্তু থেকেও অনেক বেশি তাপ যেখানে আছে সেখানে প্রবাহিত হতে পারে।
আমরা স্থির বিদ্যুৎ আলোচনা করার সময় বেশ কয়েকবার বলেছি কোনো একটা বস্তুতে চার্জ জমা করে সেটা যদি অন্য কোনো বস্তুতে স্পর্শ করা হয় তাহলে সেখানে চার্জ প্রবাহিত হয়। এখানেও কি পানির পরিমাণ আর পৃষ্ঠদেশের উচ্চতা কিংবা তাপ এবং তাপমাত্রার মতো চার্জ এবং চার্জ মাত্রা বলে কিছু আছে? যেটা ঠিক করবে চার্জ কোন বস্তু থেকে কোন বস্তুতে যাবে? সেটি আসলেই আছে এবং সেটাকে বলা হয় পটেনশিয়াল বা বিভব। যদি দুটো বস্তুর ভেতরে ভিন্ন ভিন্ন চার্জ থাকে এবং দুটোকে স্পর্শ করানো হয় তাহলে যে বস্তুটিতে পটেনশিয়াল বেশি সেখান থেকে কম পটেনশিয়ালে চার্জ প্রবাহিত হবে।
একটা ধাতব গোলকের ব্যাসার্ধ যদি r হয় এবং তার ওপর যদি Q চার্জ দেওয়া হয় তাহলে তার পটেনশিয়াল হবে V
V= 316 C
এখানে C হচ্ছে গোলকের ধারকত্ব বা Capacitance. গোলাকার ধাতব গোলকের জন্য C এর মান
যেখানে k = 9 × 102 Nm2 / 2
কাজেই যদি R, এবং R2 ব্যাসার্ধের দুটো ধাতব গোলক থাকে এবং দুটো গোলকেই সমান পরিমাণ চার্জ ę দেওয়া হয় তাহলে যে গোলকের ব্যাসার্ধ কম হবে সেখানে পটেনশিয়াল বা বিভব বেশি হবে। যদি একটি তার দিয়ে দুটো গোলককে জুড়ে দেওয়া হয় তাহলে ছোট গোলক থেকে বড় গোলকে চার্জ যেতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না দুটো গোলকের পটেনশিয়াল সমান হয়।
পটেনশিয়ালের এককটি সম্পর্কে আমরা সবাই পরিচিত, এটা হচ্ছে ভোল্ট। এবারে আমরা জানার চেষ্টা করি পটেনশিয়াল বলতে আমরা আসলে কী বোঝাই।
আমরা বিভব বা পটেনশিয়ালকে পানির পৃষ্ঠের উচ্চতা কিংবা তাপমাত্রার সাথে তুলনা করেছি, চার্জের প্রবাহ কোন দিকে হবে সেটা বোঝার জন্য এই তুলনাটি ঠিক আছে কিন্তু আমরা যদি আক্ষরিকভাবে সেটা বিশ্বাস করে নিই তাহলে কিন্তু হবে না, তার কারণ পটেনশিয়াল বা বিভব কিন্তু আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা রাশি।
যেমন ধরা যাক যদি কোনো একটা ধাতব গোলকে পজিটিভ ) চার্জ দেওয়া হয়েছে তাহলে পৃষ্ঠদেশের বিভব বা পটেনশিয়াল হচ্ছে
পৃষ্ঠদেশের বাইরে তার পটেনশিয়াল কত? এটি কিন্তু মোটেও শূন্য নয়। গোলকের চারপাশে কোথায়। কত বিভব সেটাও বের করা সম্ভব।
তোমরা জানো একটা গোলকে চার্জ থাকার কারণে তার চারপাশে ইলেকট্রিক ফিল্ড E আছে, কাজেই সেখানে যদি একটা চার্জ আনা হয় সেই চার্জটি একটা বল F অনুভব করবে যেখানে
যেহেতু গোলকে চার্জ ) পজিটিভ এবং গোলকের বাইরে রাখা ৭ চার্জটাও পজিটিভ কাজেই সেটা বিকর্ষণ অনুভব করবে এবং আমরা যদি q চার্জটাকে ছেড়ে দিই তাহলে সেই বলের জন্য তার ত্বরণ হবে, গতি বাড়বে ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার q চার্জটাকে যদি আমরা গোলকের কাছে আনার চেষ্টা করি (কল্পনা করে নাও ধাতব গোলকটা শক্ত করে কোথাও লাগানো q চার্জ সেটাকে ঠেলে সরাতে পারবে না) তাহলে বলের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে, কাজেই যতই আমরা গোলকের কাছে আনব ততই তার ভেতরে স্থিতি শক্তি হতে থাকবে।
বিভব হচ্ছে একক চার্জকে (অর্থাৎ q এর মান 1) কোনো একটা জায়গায় হাজির করতে (ধরে নাও শুরু করা হচ্ছে অনেক দূর থেকে যেখানে ইলেকট্রিক ফিল্ড খুব কম, কাজেই বল বলতে গেলে নেই) যেটুকু কাজ করতে হয় তার পরিমাণ। আশপাশে যদি কোনো চার্জ না থাকে, তাহলে কোনো ইলেকট্রিক ফিল্ডও থাকবে না, চার্জটা কোনো বলও অনুভব করবে না তাই একক চার্জটাকে আনতে কোনো কাজও করতে হবে না, তাই আমরা বলব কোনো বিভব নেই।
কোন মন্তব্য নেই