Header Ads

Header ADS

শক্তির উৎস কয় প্রকার ও কি কি?



পৃথিবীর সভ্যতার ইতিহাসকে সহজভাবে বলা যায় শক্তি ব্যবহারের ইতিহাস। মোটামুটিভাবে বলা যায়, কোন দেশ কতটা উন্নত, সেটা বোঝার একটা সহজ উপায় হচ্ছে মাথাপ্রতি তারা কতটুকু বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করে তার একটা হিসাব নেওয়া।

অনবায়নযোগ্য শক্তি

পৃথিবীর সভ্যতার ইতিহাসটা যেহেতু শক্তি ব্যবহারের ইতিহাস, তাই আমরা দেখতে পাই সারা পৃথিবীতেই সব দেশ সব জাতির ভেতরেই শক্তির জন্য এক ধরনের ক্ষুধা কাজ করছে। যে যেভাবে পারছে, সেভাবে শক্তির অনুসন্ধান করছে, শক্তিকে ব্যবহার করছে।

জ্বালানি শক্তি 

এই মুহূর্তে পৃথিবীর শক্তির সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে তেল, গ্যাস বা কয়লা। তেল গ্যাস বা কয়লা তিনটিই হচ্ছে ফসিল জ্বালানি, অর্থাৎ লক্ষ-কোটি বছর আগে গাছপালা মাটির নিচে চাপা পড়ে দীর্ঘদিনের তাপ আর চাপে এই রূপ নিয়েছে। মাটির নিচ থেকে কয়লা, তেল আর গ্যাসকে তুলতে হয়। মাটির নিচ থেকে যে তেল তোলা হয় (Crude Oil) প্রাথমিক অবস্থায় সেগুলো অনেক ঘন থাকে, রিফাইনারিতে সেগুলো পরিশোধন করে পেট্রল, ডিপ্লেল বা কেরোসিনে রূপান্তর করা হয় এবং সাথে সাথে আরো ব্যবহারযোগ্য পদার্থ বের হয়ে আসে। মাটির নিচ থেকে যে গ্যাস বের হয় সেটি মূলত মিথেন CH4, এর সাথে জলীয়বাষ্প এবং অন্যান্য পাস মেশানো থাকতে পারে এবং সেগুলো আলাদা করে নিতে হয়। আমাদের বাংলাদেশের গাস তুলনামূলকভাবে অনেক পরিষ্কার এবং সরাসরি ব্যবহার করার উপযোগী

নিউক্লিয়ার শক্তি:

অনেক দেশ নিউক্লিয়ার শক্তিকে ব্যবহার করছে, সেখানেও এক ধরনের জ্বালানির দরকার হয়, সেই জ্বালানি হচ্ছে ইউরেনিয়াম। তেল, গ্যাস, কয়লা বা ইউরেনিয়াম, এই শক্তিগুলোর মাঝে একটা মিল রয়েছে, এগুলো ব্যবহার করলে খরচ হয়ে যায়। মাটির নিচে কতটুকু তেল, গ্যাস কয়লা আছে কিংবা পৃথিবীতে কী পরিমাণ ইউরেনিয়াম আছে মানুষ এর মাঝে সেটা অনুমান করে বের করে ফেলেছে। দেখা গেছে পৃথিবীর মানুষ যে হারে শক্তি ব্যবহার করছে যদি সেই হারে শক্তি ব্যবহার করতে থাকে তাহলে পৃথিবীর শক্তির উৎস তেল, গ্যাস, কয়লা বা ইউরেনিয়াম দিয়ে টেনেটুনে বড়জোর দুই শত বছর চলবে। তারপর আমাদের পরিচিত উৎস যাবে ফুরিয়ে। তখন কী পৃথিবীর মানুষ সেটা নিয়ে খুব বেশি দুর্ভাবনায় নেই, তার কারণ মানুষ মোটামুটি নিশ্চিতভাবেই জাহে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি ব্যবহার করে এর মাঝে অন্য কিছু বের করে ফেলা হবে। যেমন নিউক্লিয়ার ফিউসান, যেটা ব্যবহার করে সূর্য কিংবা নক্ষত্রেরা তাদের শক্তি তৈরি করে। ফিউসানের জন্য জ্বালানি আসে হাইড্রোজেনের একটা আইসোটোপ থেকে, আর পানির প্রত্যেকটা অণুতে দুটো করে হাইড্রোজেন, কাজেই সেটা ফুরিয়ে যাবার কোনো আশঙ্কা নেই।

নবায়নযোগ্য শক্তি

শুধু যে ভবিষ্যতে নতুন ধরনের শক্তির ওপর মানুষ ভরসা করে আছে তা নয়, এই মুহূর্তেও তারা এমন শক্তির ওপর ভরসা করে আছে, যেগুলো ফুরিয়ে যাবে না। সেই শক্তি আসে সূর্যের আলো থেকে, সমুদ্রের জোয়ার-ভাটা কিংবা ঢেউ থেকে, উন্মুক্ত প্রান্তরের বাতাস থেকে, পৃথিবীর গভীরের উত্তপ্ত ম্যাগমা থেকে কিংবা নদীর বহমান পানি থেকে। আমাদের বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না যে এই শক্তিগুলো বলতে গেলে অফুরন্ত। এগুলোকে বলা হয় নবায়নযোগ্য (Renewable Energy) শক্তি- অর্থাৎ যে শক্তিকে নবায়ন করা যায়, যে কারণে এটার ফুরিয়ে যাবার কোনো আশঙ্কা নেই।

এই মুহূর্তে পৃথিবীর সব মানুষ যে পরিমাণ শক্তি ব্যবহার করে তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ হচ্ছে এই নবায়নযোগ্য শক্তি। যত দিন যাচ্ছে মানুষ ততই পরিবেশ সচেতন হচ্ছে। তাই এ রকম শক্তির ব্যবহার আরো বেড়ে যাচ্ছে।

জলবিদ্যুৎ:

পৃথিবীর পুরো শক্তির পাঁচ ভাগের এক ভাগ হচ্ছে নবায়নযোগ্য শক্তি। সেই এক ভাগের বেশির ভাগ হচ্ছে জলবিদ্যুৎ, নদীতে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা। নদীর পানি যেহেতু ফুরিয়ে যায় না। তাই এ রকম বিদ্যুৎকেন্দ্রের শক্তির উৎসও ফুরিয়ে যায় না। এটা হচ্ছে প্রচলিত ধারণা। কিন্তু নদীতে বাঁধ দেওয়া হলে পরিবেশের অনেক বড় ক্ষতি হয়, সে কারণে পৃথিবীর মানুষ অনেক সতর্ক হয়ে গেছে। যাদের একটু দূরদৃষ্টি আছে তারা এ রকম জলবিদ্যুৎকেন্দ্র আর তৈরি করে না।

বায়োমাস:

বায়োমাস: জলবিদ্যুতের পর সবচেয়ে বড় নবায়নযোগ্য শক্তি আসে বায়োমাস (Biomass) থেকে, বায়োমাস বলতে বোঝানো হয় লাকড়ি, খড়কুটো এসবকে। পৃথিবীর একটা বড় অংশের মানুষেরকাছে তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ নেই, তাদের দৈনন্দিন জীবন কাটে লাকড়ি, খড়কুটো জ্বালিয়ে। এই দরিদ্র মানুষগুলোর ব্যবহারিক শক্তি পৃথিবীর পুরো শক্তির একটা বড় অংশ। যদিও শুকনো গাছ খড়কুটো পড়িয়ে ফেললে সেটা শেষ হয়ে যায়। তারপরও বায়োমাসকে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস বলার কারণ নতুন করে আবার গাছপালা জন্মানো যায়। তেল, গ্যাস বা কয়লার মতো পৃথিবী থেকে এটা চিরদিনের জন্য অদৃশ্য হয়ে যায় না।

নবায়নযোগ্য শক্তির এই দুটি রূপ, জলবিদ্যুৎ আর বায়োমাসের পর গুরুত্বপূর্ণ শক্তির উৎসগুলো হচ্ছে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, বায়ো ফুয়েল আর জিওথার্মাল।

সৌরশক্তি:

শুনে অনেকেই অবাক হয়ে যাবে, মাত্র এক বর্গকিলোমিটার এলাকার সূর্য থেকে আগের তাপ হিসেবে প্রায় হাজার মেগাওয়াট শক্তি পাওয়া যায়, যেটা একটা নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্রের কাছাকাছি। সূর্য থেকে আসা আলো আর তাপের একটা অংশ বায়ুমণ্ডলে শোষিত হয়ে যায়, রাতে বেলা সেটা থাকে না, মেঘ বৃষ্টির কারণে সেটা অনিয়ন্ত্রিত। তা ছাড়াও শক্তিটা আসে তাপ কিনো আলো হিসেবে, বিদ্যুতে রূপান্তর করার একটা ধাপ অতিক্রম করতে হয়। তারপরও বলা যায় এটা আমাদের খুব নির্ভরশীল একটা শক্তির উৎস। সূর্যের তাপকে ব্যবহার করে সেটা দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা যায়। তার চেয়ে বেশি জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে সেটাকে সরাসরি বিদ্যুতে রূপান্তর করা। আজকাল পৃথিবীর একটা পরিচিত দৃশ্য হচ্ছে সোলার প্যানেল, বাসার ছাদে লাগিয়ে মানুষ তার নিজের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ নিজের বাসায় তৈরি করে নেয়

বায়ুশক্তি:

সৌরশক্তির পরই যেটি খুব দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে ফেলছে সেটা হচ্ছে বায়ুশক্তি, আমাদের দেশে আমরা এখনো বায়ু বিদ্যুতের বিশাল টারবাইন দেখে অভ্যস্ত নই কিন্তু ইউরোপের অনেক দেশেই সেটা খুব পরিচিত একটা দৃশ্য। যেখানে বায়ু বিদ্যুতের বিশাল টারবাইন বসানো হয়, সেখান থেকে শুধু একটা খাম্বা উপরে উঠে যায়, তাই মোটেও জায়গা নষ্ট হয় না, সেজন্য পরিবেশবাদীরা এটা খুব পছন্দ করেন। একটা বায়ু টারবাইন থেকে কয়েক মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব! বাতাস ব্যবহার করে যে শক্তি তৈরি করা হয় প্রতিবছর তার ব্যবহার বাড়ছে প্রায় ত্রিশ শতাংশ, এই সংখ্যাটি কিন্তু কোনো ছোট সংখ্যা নয়।

বায়োফুয়েল:

পৃথিবীর মানুষ বহুদিন থেকে পান করার জন্য অ্যালকোহল তৈরি করে আসছে-সেটা এক ধরনের জ্বালানি। ভুট্টা, আখ এ ধরনের খাবার থেকে জ্বালানির জন্য অ্যালকোহল তৈরি করা মোটামুটি একটা গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি। রান্না করার জন্য আমরা যে তেল ব্যবহার করি সেটা ডিজেলের পরিবর্তে ব্যবহার করা যায়। পৃথিবীতে অনেক ধরনের গাছপালা আছে যেখান থেকে সরাসরি জ্বালানি তেল পাওয়া যায়। পৃথিবীর অনেক দেশেই এটা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, অনেক দেশই (যেমন ব্রাজিল) এ ধরনের বায়োফুয়েল বেশ বড় আকারে ব্যবহার করতে শুরু করেছে।

ভূতাপীয়:

নবায়নযোগ্য শক্তির গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি হচ্ছে ভূতাপীয় বা জিওথার্মাল (Geothermal) শক্তি। আমাদের পৃথিবীর ভেতরের অংশ উত্তপ্ত অগ্নেয়গিরি দিয়ে যখন সেটা বের হয়ে আসে তখন আমরা সেটা টের পাই। তাই কেউ যদি কয়েক কিলোমিটার গর্ত করে যেতে পারে তাহলেই তাপশক্তির একটা বিশাল উৎস পেয়ে যায়। প্রক্রিয়াটা এখনো সহজ নয়, তাই ব্যাপকভাবে ব্যবহার শুরু হয়নি। কোনো কোনো জায়গায় তার ভূ-প্রকৃতির কারণে যেখানে এ ধরনের শক্তি সহজেই পাওয়া যায় সেখানে সেগুলো ব্যবহার শুরু হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই

Adsense YouTube Earnings: Monetizing Your Video Content

  Introduction Adsense YouTube Earnings , content creators have found innovative ways to turn their passion into a profession, and one such ...

enot-poloskun থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.